তৈমুর খানের এক গুচ্ছ কবিতা--
প্রেমিকের ডায়েরি
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত
চশমাটা খুলে আমি দাঁড়ালাম
চারিদিকে বিষাদ বিষাদ
সভ্যতার আলো নিভে গেছে
দরজা-জানালায় মৃত অন্ধকার
মুখ বাড়িয়ে দিয়েছে
কার সঙ্গে কথা বলব তবে?
হৃদয় চলে গেছে বহুদূর
হৃদয় এখন বিবাহিতা
পাষাণের ঘরে সে এখন পেতেছে সংসার
তাদেরই সন্তান সন্ততি নিষ্ঠুর নিষ্ঠুর
দুই
বিড়ম্বনা আমারই অতিথি
নিয়তিকে সঙ্গে নিয়ে বারবার আসে
ধ্বস্ত বিধ্বস্ত করে আমার নিজস্ব আশ্বাসগুলি
বিভ্রান্ত এসে রোজ পরামর্শ দেয়
আবেগের যানে চড়ে আত্মহত্যার কাছে যাই
ঘুরে দাঁড়াব আমি তবে কার অপেক্ষায়?
তিন
দু-একটি নতুন মুখ চাঁদের মতন উদিত হলে
মেরামত করতে থাকি আবার নিজেকে
অশ্রুস্রোত বয়ে গেছে ক্ষরণের কালে
এখন শুধু নৌকা বানাই
আবার ভাসাব নিজেকে নোনা জলে
কষ্টের সমুদ্র শুধু
ভাসুক ভাসুক এ জীবন
আবার যদি হাওয়া ওঠে
আবার যদি ফিরে আসে গান!
চার
বাঁচার ভেতর এত মৃত্যু বেঁচে থাকে
এত দাহ অগ্নিযাপন!
তবুও কোথাও হিমঘর আছে
নিস্তব্ধ নির্বাক রাতে চুপি চুপি যাই
গোপন কোনও সঙ্গমের কাছে।
বাইরে ভ্রমর ওড়ে, পায়রা ডাকে
কালো বেড়াল লাফায়
দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে ডাকাত অন্ধকার।
পাঁচ
সাফল্য সব বিক্রি হয়ে গেছে
খুব সুন্দর সাফল্যগুলি।
এখন ফাঁকা হাটে বেগানা বিষাদগুলি
ফেরে জাবর কেটে।
শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই
শব্দই এখন নৈঃশব্দ্যের পাখি
বাসা বোনে অলীক খড়কুটোতে
বাসায় শুধু ঝরা পালকগুলি
ওড়ার স্বপ্ন দ্যাখে।
ছয়
ছোঁয়ার ভেতর অনেক প্রাচীন ছোঁয়া
ভিড় করে সব আসতে থাকে
তীব্র ব্যাকুলতায় ইচ্ছেগুলি ছড়িয়ে দেয়
আসক্তির প্রবল অন্ধকারে কাঁপতে থাকি
ছোঁয়াগুলি নিজস্ব সব ছোঁয়া
রাতজাগা মুখ ক্লান্ত দুর্বিষহা
একাকিত্বে ঘর ভরে যায়
আমিও দিশেহারা!
সাত
রোজ এই কুয়োর ধারে
জল তুলি আর আরোগ্যস্নান চাই
আমার বিষাদ বাগানজুড়ে
আবার যদি ফুল ফোটে
জ্যোৎস্না আলো দ্যায়!
আবার যদি সাতজনমের পরি
এই অনন্তের সীমান্ত জোড়া ঠোঁটে
একটি চুমু খায়!
প্রেমিক আমি শেষ ঘোষণায়
বলে যেতে চাই।
তৈমুর খান
পরিচিতি : জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে।
পিতা ও মাতা :জিকির খান ও নাওরাতুন।
পড়াশোনা :বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি।
পেশা : উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক । প্রকাশিত কাব্য : কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১) ইত্যাদি।
পুরস্কার : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান।
ঠিকানা : রামরামপুর (শান্তিপাড়া), রামপুরহাট, বীরভূম, পিন ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ফোন ৯৩৩২৯৯১২৫০
No comments:
Post a Comment