Monday 4 October 2021

শংকর ব্রহ্মর অণুগল্প--জব্দ

শংকর ব্রহ্মর অণুগল্প--


জব্দ

-----------------------------

 

        ঠানদি মারা যাওয়ার পর, আমাদের দয়াল ঠাকুর্দা মনের দুঃখে বিবাগী হলেন। ঠানদি দেখতে মোটা কালো হলেও খুব রসিক মহিলা ছিলেন,আমাকে নাগর বলে ডাকতেন আহ্লাদ করে।

       বছরখানেক যেতে না যেতেই আমরা অবাক হয়ে দেখি ঠাকুর্দা ফিরে এলেন, আমাদেরই সমবয়সী এক তরুণীকে বিয়ে করে।

       লম্বা ছিপছিপে গড়র। টানাটানা চোখ, পানপাতা মুখ,কমলাকোয়া রসালো ঠোঁট, একবার তাকালে চোখ অন্য দিকে আর ফেরানো যায় না, চুম্বকের আকর্ষণে যেন চোখ দু'টি আমাদের আটকে থাকে। সত্যি বলতে কি এমন রূপসী রমণী , আমরা এর আগে কখনও দেখিনি নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। বুড়ো বয়সে কি করে যে এমন রত্ন তিনি বিয়ে করে ঘরে  এনে তুললেন, ভেবে আমরা অবাক হয়ে যাই।

         বুড়ো অবশ্য টাকার কুমির। তারই জোরে বোধহয়।

 আগের ঠানদির কাছে যেমন আমরা যেতে পারতাম, এর কাছে তেমন আর আমরা যেতে পারলাম না। আমি পটলা নিজেদের মধ্যে আপসোস করি, তার কাছে যেতে না পারার জন্য ,তবু হাল ছাড়ার পাত্র নই আমরা।

      কারণে অকারণে ঠাকুর্দার খোঁজ খবর নিতে যাই। নানা ছল ছুতায় তার বাড়ির আসে পাশে ঘোরাঘুরি করি। কিন্তু কিছু লাভ হয় না। আমার চেয়েও সেয়ানা পটলা। সে বলে একবার চোখে চোখ পড়লে, কাজ গুছিয়ে নেবো গুরু।

আমরা উঁকি-ঝুঁকি মারতে ছাড়ি না তার বাড়ির অন্দরে। নানা ফন্দি ফিকির খুঁজি, তার নতুন বউ মানে আমাদের ঠানদির সঙ্গে আলাপ করার, কিন্তু সে সুযোগ আর আসে না।

          একদিন শুনি পাড়ার নবীন দারোগার সাথে নাকি তার খুব ঘনিষ্ঠতা। শুনে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি।

          প্রকাশ্যে আমরা ছিঃ ছিঃ করে উঠি ঘৃণায়, আর দারোগার ভয়ে আমরা দূরে সরে থাকি তারপর থেকে।

       হঠাৎ করে একদিন নতুন ঠানদি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। শ্মশানের কাজ সেরে, আমরা ফিরে এসে দয়াল ঠাকুর্দার বারান্দায় বসি।

      ঠাকুর্দা তখন হুঁকো টানতে টানতে বৈরাগ্যের সুরে বললেন, ভারী ভালো ছিলেন তোদের নতুন ঠানদি।বড় সতী-সাধ্বী ছিলো রে। শুনে আমরা পরস্পরের চোখ

চাওয়া চাওয়ি করি। পটলা তিনবার খুক খুক করে কেশে ওঠে। পটলার কাশি শুনে, ঠাকুর্দা বলে ওঠেন, বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি তোদের?

     আমি বলি, তিনি মরে স্বর্গে গেছেন। থাক না এসব আলোচনা এখন? পটলা বলল, দোষ তো ঠানদির নয়, দোষ ওই বদমাশ নবীন দারোগার।

     ঠাকুর্দা বলে ওঠেন, দোষ কারোই ছিল না রে।তোদের ছোক্ ছোক্ ভাব দেখে, ওটা আমিই রটিয়ে ছিলাম, তোদের বাগে রাখতে। শুনে আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই। বুড়ো এভাবে আমাদের জব্দ করবে কখনও ভাবতে পারিনি আমরা।

 

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়--

সম্পাদকীয়--   চলমান জীবনের নিয়ম সৃষ্টির বাঁধনে বাঁধা। সাহিত্য মানুষের সুখ-দুঃখ ভাব ভাবনা স্মৃতি স্বপ্ন সবকিছু মিলিয়ে সৃষ্ট হয়। আর এ সব কি...