ঊশ্রী মন্ডলের গুচ্ছ কবিতা--
১
জান্নাত
যখন জেগে থাকি..
বেদনায় ভরা পেয়ালায় চুমুক দিয়ে ,
ঐ নীলকণ্ঠের মতো বেদনায় নীল হয়ে যাই l
তবুও আমি হাসিমুখে বলি..
এই তো ,এটাই যে মাধুরী ;
এই অধর ছুঁয়েছে দুঃখের সুনীল রাত ||
যখন ঘুমিয়ে পড়লাম...
স্বপ্নেরা সুখ হয়ে ফুটে উঠলো ,
ইচ্ছা আমার চোখে বসতি স্থাপন করে নিলো ll
দুঃখেরা শান্তিতে পরিণত হলো...
উপায় আকাঙ্ক্ষার,সুখ শ্বাসে বইলো ,
এটাই তো স্বর্গ এই তো আমি চাই ll
প্রভু , এ প্রার্থনা রাখি...
ঘুম থেকে যেন না জাগি ,
করো না বিচ্যুত এ জান্নাত থেকে আমায় ll
২
আশ্রয়
আমি এক সবুজ শিশুর মতো ,
নগরান্নয়ন সভ্যতায় সবুজেরা ভালো নেই ;
তাই আমিও ভালো নেই..
আমি আসলে একজন সুখবাদী মানুষ |l
এই জীবনটা ..
কখন যে বদলে গেলো ,
সে খেয়াল আমি রাখিনি |
আর যখন খেয়াল হলো ;
তখন আমূল বদলে যাওয়ার এক অনুভূতি...
আমাকে অবাক করে তুললো |
অথচ দেখো ,
আমি নিজের কথা ভুলে গিয়ে ভাবি ;
আহারে সবাই...
এবং সবকিছু কেমন বদলে গেছে ll
সবাই বা সবকিছু চলে যায় ,
কিছু কিছু কিংবা কাউকে কাউকে চলে যেতে হয় ;
আসলে আমার কাউকে ধরে রাখার ক্ষমতা নেই |
এখন আবার...
শরীর এক জায়গায় ,
আর মন আরেক জায়গায় থাকে |l
মন নানান ভাবনা শেষে...
ক্লান্ত হয়ে যখন শরীরে আশ্রয় নিতে চায় ,
তখন শরীর আপন মনে তার কর্ম করে যায় ;
মন অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বলে..
এখনও কী সময় হয়নি,আমাকে নেবার ?
৩
সংগ্রাম ও বিজয়
আমার জীবন গ্রন্থ খুলে বসলাম |
সেই শুরু থেকে আজকে পযন্ত প্রতি পাতায় লেখা , অসংখ্য শব্দগুলো চিৎকার করে বলছে ;
আমাকে নিয়ে...
যে আলেখ্য লেখা হয়েছে তা শুধু ভুলে ভরা ll
ফেলে আসা সময়ের দিকে তাকালাম |
দেখলাম সত্যিই আমার জীবন একটা ভুলে ভরা গল্প ,
আমি অনেক অনেক ভুল করেছি ;
অতীতে ফিরে..
গল্পের শুরুতে আর ভুল সংশোধন করা সম্ভব নয় ||
আজ পযন্ত বহুবার হোঁচট খেয়েছি ,
আমি কিন্তু সেটি নিয়ে ভীষণ ভাবে গর্বিত l
একেকটা ভুল,
একেকটা হোঁচট খাওয়া ,
আমাকে শক্তিশালী,আরো অভিজ্ঞ,আরো দক্ষ ;
করে গড়ে তুলেছে |
কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে...
আমি চাইলেই শেষটা আবার নতুন করে ,
নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবো |
লক্ষ্যকে পাবার জন্য...
এখনও লক্ষ্যের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছি ,
তবু মাঝে মাঝেই ব্যর্থতার তিক্ত স্বাদ ;
আমি গ্রহণ করি |
জীবন মানে নিরন্তর ছুটে চলা..
প্রতি পদে বাধা-বিপত্তি,
প্রতিকূলতায় রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হওয়া,
সে ক্ষত মুছে আবার প্রবল আগ্রাসে ঝাঁপিয়ে পড়া.. সংগ্রাম এবং সাফল্য এই নিয়েই তো জীবন ,
এবার হাতের মুঠিতে বন্ধ করবো সত্যিকারের বিজয় ||
৪
মিনতি
আজ আমার আকাশটা...
নিচে নেমে হাতের নাগালের মধ্যেই এসে গেছে,
আমি হাত বাড়িয়েই তারে ছুঁয়ে ফেললাম ;
মনে মনে আমি অত্যন্ত তৃপ্তি ও শান্তি পেলাম ||
আমার এই হৃদয়টা..
সব জান্তার অতি অহংকারে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো ,
ঐখানের বৃষ্টি সব অহংকারকে ধুয়ে দিলো ;
এখন মনের অন্ধকার পূর্ণ অহংকার হতে মুক্ত হলাম ll
আমি দেখতে পেলাম..
আমার সমস্ত পাপ গ্রাস করে ঐ বিহঙ্গ ,
আমারই আকাশের গা ছুঁয়ে আপন কুলায় ফিরছে ;
আজ আমি আজন্মের সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হলাম ll
ঘুম ভাঙলেই দেখবো..
আমার আকাশ আবারও ঐ সুদূরে চলে গেছে,
এ স্বপ্নের মধ্যে আমি বেঁচে থাকতে চাই ;
ঘুম যেন আর না ভাঙে এই মিনতিই রাখলাম ll
৫
আকাশ
আমি পৃথিবী,
আমারই ভূপৃষ্ঠ থেকে বাইরের দিকে...
বিশাল উদার বিস্তৃত বায়ুমন্ডল ও মহাশুন্যের অংশ ,
আমারই আত্মার আত্মীয় খ -গোলক ;
কিংবা আকাশ বলে পরিচিত হয়ে রয় l
আমারই চারিপাশের বায়ুমন্ডলে..
ভাসমান ছোট ছোট ধুলিকণা ভেসে বেড়ায় ,
সূর্য হতে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যর আলো ;
ঐ ধূলিকণায় বিচ্ছুরিত হয়ে...
ঐ আকাশকে নীলাভ রঙে রাঙিয়ে দেয় l
আর রাত্রিকালে সূর্যের আপনঘরে যাওয়ার কারণে..
সূর্যরশ্মির অনুপস্থিতির কারণে...
সে কালো রূপে আবার নিজেকে রাঙিয়ে নেয় ll
ঐ আকাশ এতো মহান ও শক্তিশালী...
সে সূর্য চাঁদ তারা সহ অনেক গ্রহসমূহকে ,
আশ্রয় দিয়েছে নিজেরই দরাজ বুকে;
দিন বা রাত্রির অবস্থিতিও সেই নির্ধারণ করে...
ঋতু পর্যায়ও সে রচনা করে |
আবার স্বেচ্ছাচারী মেঘেদের ভেসে যেতে প্রশ্রয় দেয়,
বাতাসকে অবারিত হয়ে বইতে আদেশ দেয়,
প্রখর তাপে বাষ্প হয়ে আশা জলকে...
বৃষ্টি রূপে ঝরে দিতে চায় l
আবার মেঘে মেঘের গর্জনযুক্ত দ্বন্ধ যুদ্ধেরও-
সাক্ষী হয়ে রয় ll
ঐ আকাশে আরো অনেক কিছু আছে
তা তোমরা তোমাদের খালি চোখে দেখতে পাওনা l
তবুও তোমাদের যত দূর...
দৃষ্টি যায়শুধু ঐ আকাশকেই দেখতে পাও l
কিন্তু ঐ আকাশ আজ তোমাদের যা দেখায়...
তা কিন্তু শুধুমাত্র অতীতকেই দেখায়,
সে শুধু বর্তমানকেই দেখে যায় l
আমি আসমুদ্রহিমাচল পৃথিবী...
তাই ঐ আকাশকে প্রণাম করি আমারই আত্মিকতায় ll
No comments:
Post a Comment