Tuesday, 5 October 2021

জেবুননেসা হেলেনের গুচ্ছ কবিতা--১ বেলা ভূমি ২ তাড়না ৩ গ্রীবায় বেষ্টিত রবি ৪ গৃহস্থালির কর্মশালা ৫ তত্ত্ব থেকে তত্ত্ব ৬ বহুব্রীহি অসুখ


জেবুননেসা হেলেনের কবিতা--

বেলা ভূমি 

 

সম্পর্কের রক্তচক্ষু

যে ভাবে ভাঙে

পূর্ব সম্পর্কের জের,

 

রুদ্র সমুদ্রের জলের

পাহাড়ে ভাঙে

তটের ঝিনুকের সুখ।

 

তুমি সেই ভাবে

আমার ভাঙো

যাপিত  অসুখ...

(উফ! কি সুখ!)


তাড়না 

 

সুখ কখনো আমার ছিলো না।

সুখের সু আর খাদ্যের খ 

আমি কখনো ভাগে পাই নি

সুখাদ্য নিজে না তৈরি করলে।

 

যদিও ঘ্রাণ আলোড়নে আমার ক্ষুধার

জন্ম হয়েছে বহুবার।

 

সুখ আর খাদ্য এই শব্দাবলীর

পেছনে ছুটেছি অহর্নিশ...


গ্রীবায় বেষ্টিত রবি

 

হেলানো তক্তপোষে বসে

শ্রাবণে শ্রাবণ নামে।

 

যখন মনে পড়ে শিলাইদহ 

মনে পড়ে রক্তকরবী। 

 

আহ! আমার মধ্যে

ছুটি গল্পের ফটিকের প্রতিচ্ছবি!

 

বর্ণাক্ষর নিয়ে উড়ে যেতে যেতে

কোথায় যে হারাই!

 

সেই যে "সে" " অল্পস্বল্প "

"লিপিকায়" তোমার খোঁজা।

 

কেনো যে ধারা বর্ষায়

"ঘরে বাইরে" আমায় ভেজায়!

 

সবুজ চিঠি হাতে "ডাকঘরে"

পড়ে থাকে কৈশোর। 

 

"চিত্রার" "সোনারতরী "

ভেসে যায় লাবণ্যের বেশে

অমিতের কাছে।

 

"শেষের কবিতায়" পাহাড়ের ঢালে ঢালে

ঝর্ণা মুখ ফেরালে 

কি এক প্রতিধ্বনি বাজে।

 

এখনও মায়াবন বিহারিণী হয়ে খুঁজি

অনন্য তোমাকে...


গৃহস্থালির কর্মশালা 

 

মন কষাকষির বাজার দরে

নারী পরে সিঁদুর শাখা নথ আর নূপুর। 

 

দুপুর কখন আসে

বিকাল কি গড়ায়?

সব দিকে চেয়ে মা হয়ে গেলে

হয় না ফেরা " ঘুড়ি উৎসবে"।

 

হাতের বাগান

ফুলের ঘ্রাণ 

তাও কি যায় নেয়া

সময়ের ফেরে?

 

ঘরের মাছের নুন তেল মসলায়

হাত থেকে কবে খসে যায় মেহেদীর দাগ...

অনুরাগ  জলে ভেজে না আঁচল,

 অনুরাধারা ভাঁড়ারের হিসেবে ভুলে যায় 

সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে।

 

মমতায় স্নেহে মায়ার কায়ায় নারী হয়ে ওঠে

কুরুক্ষেত্রের জেলে...

মূল্যায়ন- নারী মানেই সতীনের ছেলে।


তত্ত্ব থেকে তত্ত্ব


বৃত্ত থেকে বেরুলেই

তুমি পড়বে বিশালতায়,

হাবুডুবু খেতে খেতে

শিখে ফেলবে নন্দনতত্ত্ব। 

 

যেমন,

কবি বলেছিলেন,

"দেয়াল তুললেই ঘর

ভেঙে ফেললেই পৃথিবী "

তোমার হাত পাকতে থাকবে

তেমনই জ্যোতির্বিদ্যায়।

 

তুমি কিন্তু ক্ষুদ্র সেই

তোমাকে কোথাও

খুঁজে আর পাবে না।

 

বৃত্ত মানেই নিজের ভেতর থাকা।

বৃত্তহীন মানেই রহস্য চাঁদ

একটু বাঁকা...

যেমন,

আমরা তারায় খচিত 

ডোরাশাড়ি

ছায়াপথ পাড়

রাতের আকাশ দেখি।

 

মাছের বড়শি গেলা

মেকি কৃত্রিমতা ছেড়ে

 

প্রকৃতির বুকে হাঁটা...


বহুব্রীহি অসুখ


মাঝে মাঝে অভিমানী মুখ দেখে

দাঁড়াবো অপেক্ষার দ্বারে। 

 

দ্বাররক্ষী হয়ে তুমি বিন্দুবিসর্গ 

সব কাঁধে এসে সম্মুখে বলবে,

ছিঃ এ কি রঙের টিপ পরেছো!

খুলে ফেলো।

 

লাল টিপে তোমাকে লালিমায়

সময়ের সুধায় কেমন যে ভাসায়!

উফ! সে আর বলতে?

 

পর্দা টেনে রাখো।নজর না লাগে!

 

হেসে কুটিকুটি, লাজরাঙা হাসি

গড়াবে উপন্যাসের বিরহী পাতায় পাতায়।

 

পায়ের বেড়ি,

দিচ্ছে ভীষণ কোষ্ঠকাঠিন্য সুড়সুড়ি। 

 

বুড়িদিন যাচ্ছে ধীরে।অনেক বিষন্নতার ভীড়ে।

ভীতটাও যেনো নড়ছে একটু ভীতু ভাব

অবলম্বন করে।

 

সত্যি যদি উপন্যাস ফুঁড়ে একদিন

লালটিপ পরা বসুন্ধরা  বেরিয়ে 

আসে বেড়িবাঁধ পেড়িয়ে...

 ঠিক!  ঠিক!চিনবে তো!

 

No comments:

Post a Comment