Tuesday 5 October 2021

জয়া গোস্বামীর কবিতা ও গল্প-- কবিতা-- ১ "হিমেলের অপেক্ষা’’ ২ বোবা কলম ৩ "কবির আক্ষেপ”, গল্প-- নষ্ট মেয়ে


জয়া গোস্বামীর কবিতা--

১ 

"হিমেলের অপেক্ষা’’

 

জানি  আমি তুমি আসবে না শরতের এই সাঁঝে?

এনেছো সাথে করে হিমেলকে সাদরে সবার মাঝে  !! 

 

আমার মন হয়েছে চঞ্চল 

দক্ষিণা আজ বাতাসে

আসবে বলে মন ডানা ঝাপটায় কেবল হুতাশে!! 

 

নতুন হিমেলেকে সাদরে গ্রহণ করবো প্রভাতে 

থাকবো বসে শুধু তোমার জন্য পথচেয়ে আশাতে!! 

 

নির্ঘুম রাতে ধরা দেবো সেদিন স্বপ্নের মাঝে

আমাকে গোপনে টানবে কাছে  হৃদয়ে অবুঝে!! 

 

সকালে ধানগাছের ডগায় শিশির বিন্দু হয়ে

প্রকৃতির অপরূপ রূপে মুগ্ধ হব তোমাকে পেয়ে!! 

 

মাতোয়ারা হবো‌ তোমার অবগাহনের সৌন্দর্য্যে,

দিশাহীন হবো  সেদিন তোমারি বর্ণচ্ছটার প্রাচুর্যে!! 

 

বিরহী মুখে ভেসে ওঠবে  সেদিনের রূপের জলছবি

আমি পাগল  হবো  দেখে সেদিন ঐ মুখে  আমার প্রতিচ্ছবি !! 

 

নতুন হিমেলের সাথে সন্ধি গড়ে সেদিন শিশিরে ভিজবো

সৌন্দর্য্য রূপের স্পর্শ করে অপেক্ষার আবেগে ভাসবো!! 

 

প্রিয় আমার ঘরে একটি বছর পরে এলে হিমেলের সকালে

অবশেষে রক্তিম আলো ছড়িয়েছে হিমেলের এই মায়াবী 

বিকেলে!! 

 

আসলেই যখন তোমার  সাথে  চলে যেতে চায় মন বহুদূর 

শরতের এক সাদা মেঘ  হাতছানি দেয় বলে চল দূর বহুদূর!!

 

বোবা কলম

 

মনের ঘরে দখিনা জানালা দিয়ে বইছে  মৃদু সমীরণ

স্মৃতির পাতায়  আছে জমে পুরানো কত অভিমান !! 

 

বোবা কলম কি কথা লেখে খাতার পাতায় উদাসি মনে

কেউ জানে না অভিমান গুলো লিখে রাখে খুব গোপনে!! 

 

লিখতে চাই জীবনের  অতীতের কিছু ফেলে আসা স্মৃতি

মধুর শব্দে লিখবো মনের সুপ্ত ভালোবাসার আবেগের প্রীতি!! 

 

অভিমানে  লিখতে গেলে শব্দরা হয় কেবল বেসামাল

হাতড়াই তখন স্মৃতির পাতায় ধূসর ধুলিতে যাদের ফেলে আসলাম---- 

 

কবিতা লিখি শুধুই অভিমান করে  আজ কে বোঝে ?

বলতে চাই হৃদয়ের নীরব কথা শুধুই হৃদয়ের মাঝে!! 

 

হারাই আমি নিঝুম দুপুরে নিত্য কবিতার পাতাতে

বোবা মন বেঁচে থাকে আজ কবির কবিতার খাতাতে!! 

 

লিখতে গিয়ে  কেবল স্মৃতি ভ্রষ্ট হই  তখন থাকি নির্বাক 

ভালোবাসা এত দামী বুঝিনি শেষ লগ্নে এসে হচ্ছি অবাক!! 

 

যারা দিলো যন্ত্রণা ভাঙলো নিষ্পাপ সুন্দর মনটা 

সেই স্মৃতির  ঘরে বসে  আছি অপেক্ষার শেষটা!! 

 

তবে কেন, এভাবে এতো অভিমান করে নিত্য  সাজাই কবিতা?

নিজেকে লুকিয়ে রেখে জীর্ণ পাতায় ঝরাই  নিজের সত্ত্বা!! 

 

অন্ধকারে  বেশ আছি নিজেকে বন্দী করে ,স্মৃতি ভুলবো বলে আজ কে

ক্ষণে ক্ষণে ফিকে স্মৃতি কেবল  মনে করায় এসে অতীতের সত্যকে!!

 

"কবির আক্ষেপ”

 

সূর্যের বর্ণ ছটায় কোন দিন কাব্য লিখিনি

ভোরের  প্রভাতে নিজেকে কোন দিন খুঁজিনি!! 

 

রাতের অন্ধকারে বসে হারিয়েছি খাতার মাঝে 

অব্যক্ত কথা লিখে রেখেছি সেদিন সাঁঝে!! 

 

কোন সময় তুলে ধরেছি নিজের অতীতের রূপকথা

আবেগে ভেসেছি লেখার মাঝে লিখেছি গল্পকথা !! 

 

বলতে চেয়েছিলাম নিজের ফেলে আসা কিছু অতীত 

শুনতে চাইনি আমার হৃদয়ের কথা তাই সবটাই কালাতীত!! 

 

আর নেই প্রত্যাশা শুধু অতীতের এক বুক অভিমান 

খাতার পাতার মাঝে লিখে রাখি দুঃসহ নিরভিমান !! 

 

নিজেকে খুঁজেতে  গিয়ে দেখি রাতের গভীরতা 

তখন লিখে রাখি নিজের কিছু মুহুর্তের উপকথা!! 

 

হাহাকার জমাট বাঁধে  শূন্য নিশুতি রাতের গহীনে

প্রেমে-অপ্রেমে যৌবন ফুরিয়েছে হৃদয় হরণে !! 

 

নিজের দৃষ্টিকোণের  বাইরে আজ আমি যে 

কি করে লিখি মধুর বাক্য শব্দরা করে নিত্য জব্দ যে!!

 

 কখনও সাজাই অমাবস্যায়  ছিন্ন পাতায় কাব্য 

কখনও আনমনে ভাবি বসে কি আমার ভবিতব্য!!

  

অনেক পেলাম অদৃষ্টের পরিহাসে লিখেছি সব অবাস্তবে

নিস্তব্ধ একাগ্রতা ভেঙে ফিরে আসি আবার বাস্তবে !!

 

জয়া গোস্বামীর গল্প-- 

নষ্ট মেয়ে

 

সেদিন গভীর রাতে মধুর ঘুম ভাঙে---

কি একটা স্বপ্ন সে দেখে মনে করতে কিছুতে  পারে না ।পূবের আকাশ বেশ ফর্সা হয়ে এসেছিল ও উঠে বিছানায় বসে।আর হাতড়ায়।ভাবে আগের জীবনের কথা কত কি অপূর্ণ স্বপ্ন বিভোরে ফেলে এসেছিল ভুলে---

ইদানিং খুব মনে পড়ে আগের জীবন আগের ফেলে আসা অতীত সব আজ কাল মনের ঘরে উঁকি দেয়।

বাবা মার মুখের  দিকে তাকিয়ে নিজেকে বিসর্জন দেয় এত অভাব সহ্য করতে পারেনা মধু অনেক খুঁজে একটা কাজ  যোগাযোগের রাস্তা পায়না কত নিজের লোকেদের 

বলেছিলো সেদিন কেউ  একটা কাজ  যোগাড় করে দেয়না ।রাতের  অন্ধকারে মধু হারিয়ে যায় খোঁজ রাখেনা মধুর মনের  মানুষের আর কোন দিন। বেশ চলে যাচ্ছিল 

হঠাৎ  একই স্বপ্ন  দেখে রোজ মধু কেনো দেখে বোবা মন রাস্তা পায়না এই স্বপ্নের------

তবে মধু কি স্বপ্ন দেখছে অবচেতন মনে??

লোভ হবে  হয়ত  কি এমন বয়স মধুর  চিন্তা করতেই পারে।আবার  গোধূলিতে বকের ডানায় ভর করে রাত নামতে থাকে ।নিজেকে আবার  সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

রোজ নতুন পুরুষ আর ভালোলাগে না। বলতেও পারে না কাউকেই অভাব এসে আঁচড় কাটে।বাবা মার  করুণ মুখ মনে করে আবার  যায় স্বপ্ন বিক্রি করতে। ফিরে আসে রাতে নিজেকে ঝরা ফুলের সাথে সেজে।আজ  কেমন মনমরা থাকে।সেজেছে আজ একটু আলাদা রকম  ঠিক ঐ ওদের  মত গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি চুলের সাজ ও পাল্টেছে  ঠোঁটে লিপস্টিক ও চড়া করে দিয়েছে অন্য সাজ মধু বাইজির সাজে সেজেছে ।মধুকে মধু গলাটিপে মেরে ফেলেছে।বাড়ির সামনে গাড়ি আজ একটু আগেই এসেছিল। গায়ে সুগন্ধি মেখে গাড়িতে উঠে বসলো ওর ড্রাইভার খুব  ভালোবাসে এক বার  শুধালো দিদিমণি আজ তোমাকে চেনা যাচ্ছেনা।মধু বাঁকা হাসি হেসে বললে চল তাড়া আছে । যখন পৌঁছানোর কথা আগেই চলে গেলো।অনেক ফুল মাথায় দিয়ে সেজে যখন  আসরে নামলো প্রথমে চিনতে পারেনা আস্তে আস্তে ঝাড়ের আলোতে দেখলো তার ভালোবাসার মানুষ বসে আছে আজ  তার  সামনে ।ছন্দ পতন ঘটলো নাচ আর  নাচতে পারে না সবাই তিরস্কার করে কিন্তু অসহায় মুখটা কেউ দেখেনা  একোন মধু আজ সবার সামনে হাত জোড় করে ফিরে আসার  সময় মধু বলে কে ডাকে ।পেছন ফিরে দেখে অম্লান মুখে সাগর দাঁড়িয়ে আছে ।দুহাত বাড়িয়ে

দাঁড়িয়ে। মধু বলেছিলো আজ আমি নষ্ট মেয়ে হয়েছি রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছি  সাগর  আমি আসছি কেমন।সাগর চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাওয়া দেখে ।

ঘরে এসে অনেক কাঁদে আবার বিছানায় ঘুমে আচ্ছন্ন 

হয়ে পড়ে ।ঘরের কে কড়া নাড়ে দরজা খুলে দেখে সাগর সব ফেলে ওর সামনে---

 

No comments:

Post a Comment