শিখা মালিকের কবিতা--
কিশোরী বেলা
কিশোরী বেলা সবে ডানা মেলছে শরীরে ,
শরীরে আসছে নানা পরিবর্তন -মুখটা দিনে দিনে হচ্ছে ভীষণ লাজুক পানপাতা।
বক্ষমাঝে স্তন যুগল সুগঠিত হচ্ছে।
কোমর টা দিনে দিনে আর্কষণীয়তা কে আঁকড়ে ধরছে,
মন যেন ভাবতে চায় কারও কথা তাই নূপুর পরা পা দুটি বড়ই চঞ্চল ।
মায়ের শুধু শাসন শাসন আর শাসন,
মাকে একনায়কতন্ত্রের সেরা শাসনকর্তা মনে হয়।
যখন তখন হাসতে মানা হাঁটা চলায় কত বিধি নিষেধ ,
কিশোরী বেলা ভাবে মা কি তাকে হিংসা করে?
মনের জমাট বাঁধে ক্ষোভ -মা এত শাসন করে কেন।
সে আর কদিন পরেই আকাঙ্ক্ষিত যৌবনে প্রবেশ করবে আর যৌবন প্রতিদিন এক পা এক পা করে মায়ের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে,তাকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় রত থাকে মা।
শাসনের এই বদ্ধ কারায় বড়ই একা মনে হয়,
সব ভেঙেচূরে কল্পলোকে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে কিশোরী বেলার।
শিখা মালিকের গল্প--
কিশোরী স্মৃতি
-----------------------------------------------------
এই থাম রে জল ছিটাস না সঞ্চারী,আমার স্কার্টটা ভেজালি তো - সুতপা মৃদু রাগ দেখায় ,সঞ্চারী বলে নারে জলের উপর লাফিয়ে চলতে দারুন মজা।
সঞ্চারী সুতপা জুঁই চন্দ্রা করবী এরা ক্লাস ফাইভে পড়ে হীরাপুর হাইস্কুলে,স্কুলটা দোতলা কিন্তু নিচের তলায় ক্লাসরুম মাটির মেঝে।
কিছুটা দূর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কানানদী,সারা বছর রুখা শুখা চেহারা কিন্তু বর্ষা এলেই বেশ হৃষ্ট পুষ্ট,তখন সে পুকুর ডোবা ভরাট করে চলে আসে স্কুলের প্রাঙ্গণে ,প্রাঙ্গণের অপর প্রান্তে টিউবয়েল সেখানে জলের মধ্যে হেঁটে জল খেতে যাওয়ার মজাই আলাদা।
ক্লাস ফাইভের পড়া মেয়ে গুলি একটু বেশী দুষ্টু ,স্কুল ড্রেস ভেজানো নিত্যদিনের ব্যাপার।চন্দ্রা জল ছিটাচ্ছে বলে করবী জলের মধ্যে তাড়াতাড়ি চলে যেতে চাইলে হাঁটুর নীচে পর্যন্ত জমা জলে -ঘাসে পা পিছলে পড়লো জলে ড্রেসটা পুরো ভিজলো ক্লাসে এসে স্যার কে বলতে তিনি বললেন তোর ছুটি যা।
চন্দ্রা হাসতে হাসতে বললে আমার জন্যই তো ছুটি পেলি,করবীর খুব মজা সে বাড়ি ফিরছে হেঁটে দশ মিনিটের পথ তার বাড়ি।সকালে বৃষ্টি হয়েছে তাই গ্রামের রাস্তায় অল্প অল্প জল জমেছে জমা জলের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে একটা বালক খেলা করছে।
বর্ষা কালে স্কুলের চারিদিকে জল থাকে তাই রুমের মেঝে নরম থাকে।
সুদর্শন স্যার প্রায় দিন বলেন একটা বেঞ্চে চারজনের বেশি বসবি না বেঞ্চ ঢুকে যাবে মাটিতে,
দুষ্টু বুদ্ধি চাপে কিশোরী গুলির মাথায়,স্যারের আগোচরে একটা বেঞ্চে ছজন বসে বেঞ্চ অনেকটা ঢুকে যায় ওরা চিৎকার করে স্যার বেঞ্চ ঢুকে যাচ্ছে স্যার কোন রকমে টিফিন পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে ছুটি দেন ওদের।
সেই দিনটার যখন কুড়ি বছর বয়স সুতপা দাঁড়ায় স্কুলের সামনে রাস্তায় ,সিঁদুরে রাঙা সিঁথি চওড়া পাড়ের তাঁতের শাড়ি ছেলে মেয়ের হাত ধরে বাপেরবাড়ি এসেছে ,সুতপার চেহারাতে অনেক বদল হয়েছে বদল হয়েছে স্কুলের চেহারাতেও,স্কুলের প্রাঙ্গনে আর জল জমেনা ক্লাস রুমের মেঝে এখন পাকা,স্মৃতি হাতড়ায় সুতপা।
No comments:
Post a Comment