প্রেরণা বড়ালের কবিতা--
১
মেঘের ক্রন্দন
মেঘ তুমি ভারি মনে,
চলিতেছ আনমনে,
ক্ষনে ক্ষনে করিছ ক্রন্দন।
সম্বর সম্বর তোমার রোদন।।
কারন তোমার,
চারিদিক জলাধার,
সকল প্রাণী করিছে হাহাকার।
কেহ বাসস্থান হারা,
কেহ বা আহার ছাড়া,
দিনাতিপাত করিছে তাহারা।
কেন এই আচরণ,
সবারই নিবেদন,
কেহ কি করেছে অপমান?
সকলই জীবন,
ভালোবাসে আজীবন,
তোমারই অমৃত বর্ষণ।
এই ধরা মাঝে,
অপরূপ সাজে,
প্রকৃতি ও টেনে লয় কাছে।
তোমাকে তো দেয় মান,
এ জগতে সব প্রাণ,
তবু কেন এত অভিমান?
এই জল প্রলয় কেন?
শান্ত হও একটু ক্ষণ,
বারেক মোর কথাটুকু শোন ।
খুশিতে বর্ষিও তবে,
পিপাসিত জীব যবে,
সাদরে তোমাকে ডাকিবে।
তাপিত এই ধরা হবে,
ঝিল নদী সহ চাবে,
তবে এলে সব সুখময় হবে।
তোমার আদর হবে-
পৃথিবী সুন্দর হবে,
কেহ দুঃখ কখনো না পাবে।।
শরৎ
ভোর রাতে তোমার পরশে জেগে উঠলাম।
এক বছর পর তোমার ছোঁয়ায়,
আধো নিদ্রাতেও উঠে বসলাম।
বেশ ভাল লাগছে তোমাকে।
অন্তর থেকে অনুভব করছি তোমাকে।
সূর্য উদয়াচলে যেয়ে পারেনি তখন।
ঘুমের আবেশ টাও পুরোপুরি কাটেনি তখন।
পায়ে পায়ে কখন যেন চলে এলাম ফুলের বাগানে।
এবার শরৎ আমার শারা শরীর জুড়ে দোলনার দোলনে।
গ্রীষ্মের উত্তাপ বর্ষার গুমোটের পর যখন তোমাকে পাই-
শরৎ ঋতু কতো যে ভাল লাগে তার কোন হিসাব নাই।
গল্প--
তিনটি পুরুষ
উর্বশী আর উত্তম স্কুলে পড়ত।
উর্বশীর বাবা নোকরি পেশা লোক ছিলেন। প্রায় বাইরে থাকতেন। ঘর সংসার ওর মা আর ঠাকুরমা মিলেই চালাতেন।উর্বশী আর উত্তমের মধ্যে ধীরে ধীরে একটা ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়।উত্তম ওর ছোট ছোট ভাল মন্দের খুব খেয়াল রাখত। ও একটু স্পেশাল থাকলেও অন্যদের জন্য কম করত না। এই গুণটাই উর্বশীর বেশি ভাল লাগত। যাইহোক ওদের ভাললাগা বা ভালবাসা বেশীদূর এগোবার আগেই উর্বশীর বিবাহ হয়ে যায় অমূল্যর সাথে। উর্বশীর বাবা কিছুতেই ওকে কলেজে পড়াতে রাজি হলেন না।বললেন "স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছে,ভাল সম্বন্ধ এসেছে,একা ছেলে,আর পড়িয়ে লাভ নেই। "
শ্বশুর বাড়ীতে পা দিয়েই উর্বশী বুঝতে পারল রাজার হাল কাকে বলে। কাজের লোকের কম ছিল না। কম ছিল মানুষের। শ্বশুর মশাই কড়া মেজাজের লোক ছিলেন কিন্ত বলা বাহুল্য ওর বাবার থেকেও বোধ হয় ও বেশিই স্নেহ পেয়েছে ওনার কাছ থেকে।আর ওর শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে শিখেছে কি করে সংসার চালাতে হয়। আর ওর স্বামীর কথা ?
সে এমন একজন মানুষ ছিলেন,এরকম মানুষ উপর ওয়ালা দুটি সৃষ্টি করেছেন কিনা সন্দেহ। শুরুর দিনেই উর্বশী ওর স্বামীকে সবই বলে। ওর আর উত্তমের কথা। ওদের বাড়ীর এবং ওদের জীবনের খুঁটিনাটি সব কথা। অমূল্য হাসত কখন মজা করত।কিন্ত কোনদিন ও রাগ করেনাই।ওকে বলত "তুমি হলে উর্বশী, সবাই তো তোমাকে দেখে আকৃষ্ট হবেই। হাঃ হাঃ হাঃ।" ধীরে ধীরে অমূল্য ওর মনে এমন একটা জায়গা তৈরি করে নিল যেখানে কেউ কোনদিন ও ছিল না। ওর বাস্তব এবং স্বপ্ন ঘিরে শুধু অমূল্য আর অমূল্য। বিয়ের চার বছরের মধ্যেই ওদের দুটি পুত্র সন্তান হয়। খুব সুন্দর কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। ওদের বিরাট ব্যবসা।
বাইরের অনেক কর্মীদের রাখা হত ব্যবসার কাজের জন্য।
একদিন অমূল্য উত্তমকে নিয়ে এল ওদের বাড়ীতে। ব্যবসার ব্যাপারে ওর সংগে কিছু আলোচনার দরকার আছে সেইজন্য।উর্বশী এও জানতে পারল,ওদের ব্যবসার জন্য যে সব কর্মচারীরা কাজ করে উত্তম ও তাদের ভিতর একজন। উর্বশী ভীষণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেল। যখন চাকর বাকর থাকা সত্ত্বেও অমূল্য ওকেই দিল উত্তমের দেখাশোনার ভার।ও কিছু বলতেই বলত "আরে বেচারা তোমাকে তো পেলনা কমসে কম তোমার সেবা যত্ন টুকু থেকে বঞ্চিত করনা।" দুর্ভাগ্য ওর এর বছর খানেক পর প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যায় অমূল্য। তার পর ব্যবসা বাঁচানোর জন্য হোক কিম্বা ওকে খুব স্নেহ করতেন সেইজন্যই হোক ওর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওর আর উত্তমের আবার বিয়ে দেন ওর শ্বশুর মশায়।
উত্তম বাচ্চাদের বাবার স্নেহ দিয়েই মানুষ করেছে। ওর শ্বশুর শাশুড়িকে নিজের মা বাবার মতই দেখেছে।সারা সময় ব্যবসা নিয়েই পড়ে থাকত।উর্বশীর দিকে খেয়াল রাখত না এমন টাও নয়। কিন্ত ওর কাছ থেকে বুঝি কোন চাওয়া পাওয়াই উত্তমের ছিল না। ও ছিল স্বার্থহীন একজন বন্ধুর মত।অন্ধকারেও চোখ বুজে যাকে বিশ্বাস কযা যায়।সে যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন দিব্য পুরুষ।
আজ সারা বাড়ী কত লোকজন, ঝকমক করছে আলোয়।কিন্ত ওর মনের ভেতরটায় কোথাও একটা শুন্যতা বিরাজমান থাকে সব সময়।ওর নব্বই বছরের জন্মদিন পালন করেছে নাতি, নাতনি,ছেলে বৌরা। ভরাপুরা সংসার। তবুও তিনটি পুরুষ ওর জীবনের যেন অধিকাংশ জায়গা জুড়ে আছে।
আজ ওরা কেহই নাই। ছেলেরা দাঁড়িয়ে গেছে। ব্যবসা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।কিন্ত উর্বশীর মনের মধ্যে ওদের যে জায়গাটা ছিল সেই জায়গাটা তেমনই আছে আর থাকবে চিরদিন। ওরা তিন জনই যে বড় ভালবাসার --বড় শ্রদ্ধার --ওর কাছের----।
No comments:
Post a Comment