-------------------------------------------------
১
অসুখ
আঙুলে জড়িয়ে নিয়েছি অন্ধকারের সুতো, বাঁধি টান করে
দুই কালো রং পারে, দুঃখ নিজের মতো বেয়ে যাবে--- ঘাটে
সব ফুল উড়ে গেছে জমাট থেকে এক একটি পাপড়ি ছিঁড়ে
সঞ্চিত হয়েছে ফকিরের ঝোলায় শুধুই নিঃশব্দ, মধ্যাহ্ন হাতে
ভিতর থেকে গাছেরও আত্মহত্যা আছে--- কে লিখেছে,কথা
যত বলা হয়ে গেছে, যত পাপ আর পরিতাপ ছেপেছে ঘাস, পথে
জন্ম সূত্র খাদানের পাথর, প্রকীর্ণ লিপির বুকে ছ্যাদলা প্রক্ষেপে
নতুন দিনকাল শিকড় মেলেছে, খোলস ছেড়েছে একটি রঙিন
সাপ, অন্ধকারের আনাচেকানাচে তবু তাকে মনে পড়ে--- ভয়ঙ্কর
যুগপত সুন্দর, রাজকীয় প্রাগৈতিহাসিক, পৃথিবীর এক দৃঢ় সংস্কার ।
২
দলিল
এখনও আমার কাছে কত কি ভার হয়ে আছে
এখনও বহনের শর্ত দিয়ে কে যেন বেঁধে রেখেছে,
ফসল কাটা মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে ফেরার ডাক
তবু প্রতি সন্ধ্যেয় আসে
চাঁদের প্রান্তরে ধূ ধূ রূপোলি অতীত
বন্ধুর মতো কাঁধে হাত রাখে,
একটা ডিঙি অপেক্ষা করে ঘন কচুরিপানার ফাঁকে
হাত বৈঠেয় টেনে
ওপারে নিয়ে যাবে বলে সবুজ খোশলার গভীর
গভীর আঘাত ভেঙে ভেঙে,
হয়তো সে ঠিক নিয়ে যাবে কারও পাশ জালে
গোপনে মাছ ছাড়াবার মতো
অস্বীকৃত, অনিহা ভরা অশ্রুর অভিশাপে
সব ভার লঘু হয়ে জলে--- শ্যাওলার গায়ে ।
৩
স্যাঁতসেঁতে
বিড়ির সুতোয় এসে থেমে যাওয়া আগুনের মতো
চ্যুত হয়ে যাবে একদিন, ভাঙা উৎসাহ থেকে স্থবির
প্রথম টানের বুক ভর্তি গাঢ় ধোঁয়া উপকাহিনী হয়ে
বাতাসে রেখে রেখে যাবে শুধু অভিশপ্ত কার্বন কণা
সওয়াল করবে সে-ই, যে আপ্রাণ ভুলে গিয়েছিল
তোমার পকেট ভর্তি কত অগণিত মৃত্যুর যন্ত্রণা ।
অন্ধকারের শিবিরে তুমি যে যাপন করো বিগত
কতবার আত্মহত্যার চিঠি লিখে ছিঁড়ে ফেলেছ
প্রাণদণ্ডের আগে স্নান সেরে, শেষে ফাঁসকে বলেছ--- না
ততবার কুড়োতে গিয়েছ নদীতে বাগানে প্রদাহের উপশম
যে আগুন বন্দি দশার মতো নিভু, অক্ষত, সুতো ছোঁয় না।
৪
প্রজাপতিটির কথা
এই যুদ্ধক্ষেত্র গ্রহান্তরের বিস্তির্ণ শূন্যতা হয়ে ওঠে রাতে
মৃত্যুর ক্লান্ত অভিসন্ধিও যেন ঝিমিয়ে পড়ে
যখন চোরাগোপ্তা ইস্তেহার পৌঁছে দেয়ার মতো
সংকল্প নেই কারও হাতে
বোমারু কখন যে অতর্কিতে উড়ে আসে মাথায়
বন্দিশিবির লক্ষ্য করে
তবু মুখোমুখি যুদ্ধের অসহায় বন্দুকবাজেরা
অভিশম্পাত করে জন্মকে
পাথরের দেয়ালে লাগে ক্ষুদ্র পিলসূজের
একটু মাত্র প্রকম্পিত আলো
নিকট নদীর বুকে দুলে ওঠে পরিত্যক্ত নৌকোর দল
দূর অরণ্যে যখন বাতাসের হা হুতাশে মিশেছে মৃত্যুর গন্ধ
ঠিক তখন এতটুকু চমকের সন্ধানে একা এক প্রজাপতি
বন্দিশিবিরের পাথর দেয়ালে
বিপন্নের মতো এসে বসে, গবাক্ষ পথে।
৫
সোনার পাথর
ঘাম আর রক্ত আর যন্ত্রণা আর খিদে
আর ঘুরিয়ে দেখলে সেই শূন্য কপর্দক
চোখ বন্ধ করে শুনলে, স্থায়ী অভাব আর অস্থায়ী কাজ
আর কত যে তার ফ্যা ফ্যা করছে রাস্তায়, বেকার
বন্ধ হয়ে গেছে সারি সারি ঝাঁপ, ধাক্কা মেরে করেছে বের
তালা আর তালা ঝুলে ঝুলে জং ধরে গেছে
যক্ষ্মা আর অপুষ্টি আর রিকেট, কলেরা অথবা আত্মহত্যায়
সভ্যতার পুঁজ-রক্ত, লালা, থুথু আর লালসার সব অধ্যায়---
মে দিবস একটা রাজনীতির জুতোর সুখতলা
পথ পেরতে পা গলায় নি কোন শালা
কাতারে কাতারে রোগা পা আর কালো হাত দেখে
দিয়েছে টান, শুধু এক লম্বা মিছিলের ফরমান
তবু বস্তির মতো ঘর থেকে,ফুটপাত থেকে, হাজার মাইল
দূর থেকে,ত্রিপল-তাবুর ঠিকানা থেকে, রেশনের মোটা চালের
প্রত্যাশা থেকে,অসুখ থেকে, অসংগঠিত এক হতাশা সমুদ্র থেকে
নূব্জ, নুলো, খোঁড়া, অসাড়, শক্তি হীন, বিচ্ছিন্ন একা একা
যাযাবর, কর্মহীন, প্রতিবাদ হীন, চির শ্রেনী হীন এক শ্রেণী
--- 'শ্রমিক দিবস' তাদের কানে পচে যাওয়া একটি ক্লিশে গল্প
রুটির মতো চাঁদের দিকে তাকিয়ে তারা এখনও শোনে
লুটেরা বক্তৃতার মঙ্গল জয়ের সমস্ত পরিকল্পনার দুন্দুভি আওয়াজ ।
৬
সব উপনদী
হাডসন নদী তীরে হেঁটে এসে দাঁড়ালো একটি লোক
ধূ ধূ দু'পারে তাকিয়ে মুছে নিলো তার দুই চোখ
আকাশের দিকে হাত তুলে বলল, এ শহর ভালো হোক ।
টেমসের পারে এসে একটি বেঞ্চে বসে জনৈক মানুষ
সূর্য ডুবতে দেখে বুঝলো, চুপসে গিয়েছে উড়ন্ত ফানুস
দিগন্তে চোখ রেখে ঝরঝর কেঁদে বলে, এই এলো হুঁশ ।
গঙ্গার ধার থেকে দূরে দূরে স্পষ্ট দৃশ্যমান হলো সেই ছবি,
যমুনার পারে দিশেহারা হয়ে কিছু খাটো ধুতি, ছেঁড়া পাঞ্জাবি
চরম আর্তনাদে জানালো, তারা খুঁজছে নিজস্ব ছোটো নদী।
পৃথিবীর সব নদীতে ঢেউ থেমে গেল একই তালে একই কালে
শুনশান শহরের পথে পথে আর ঘরে ঘরে দরজা আঁটা খিলে
শূন্য নৌকোর সারি ইয়াংসিকিয়াং, মিসিসিপি, ব্রহ্মপুত্র বা নীলে।
৭
লাটাই জানে
দখলের মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় পতপতানো ঘুড়ির বড্ড মেজাজ
ভোকাট্টা শুনলেই তার একটা নিজস্ব নেশা চেপে যায় ,
ছোট্ট হালকা পতেঙ্গা ওড়ে বোকা ফরফর, মাৎসান্যায়ে ছোটো মাছ
সে জানে অনন্ত আকাশ, দিগন্ত নিতান্তই ভুয়ো দর্শন, স্বাধীনতা ।
যুদ্ধ গুলো আসলে মুখোশ বিক্রেতার জানার কথা নয়, রুটি রুজি
যেমন ছাপাখানার পিন মারা কর্মচারী খেয়াল করে কি--- কখনও
কাগজে কালিতে শাসনের ছাড়পত্র, কোটি কোটি ব্যালট ছাপা হয়।
দখলের মাঞ্জায় বড্ড কাঁচের গুড়ো মেশায়, ভীষণ আঠায়, ভীষণ ধাঁরে
একটা দারুন খেলার মতো, নির্বোধ বিশ্বাসী, নিরিহের ভোকাট্টা, সে মরে।*
-------------------------------------------
*যোগাযোগ:
সুব্রত বিশ্বাস ( অনিরুদ্ধ সুব্রত )
প্রযত্নে- শঙ্কর প্রসাদ সাহা
গ্রাম ও পোষ্ট- পানচিতা
বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
পিন- ৭৪৩২৩৫
ফোন- ৮৪৩৬৩৮৭৩৯১
ইমেল- biswassubrata1168@gmail.com
ফেসবুক লিংক- https://www.facebook.com/anirudha.sen.96
No comments:
Post a Comment