জয়িতা ভট্টাচার্যর কবিতা--
১
নিরঞ্জনা
একমুঠো শিউলির মতো আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছ
নিঃসাড় মণ্ডপে কেউ নেই আর।
জলে ভেসে গেছে,শান্তি-জলে...
অনাবৃত দেহ সব,অবনত প্রাণ।
এখন তোমার চোখে আয়না দেখতে পাই।
শিশিরবিন্দুর মতো শুকিয়েছে অশ্রুজল
এখন মন্ত্রপাঠে শব্দ হয় না আর।
স্তনবৃন্তে অমৃতের লেশ নেই.....
চিত্রার্পিতের মতো কাঠামো দাঁড়িয়ে মৃতবৎ।
সমবেত উল্লাসে হৃদস্পন্দন
শুনতে শুনতে
চলে যাবে তুমি,ভেসে ভেসে জলে,
ফিরবে না পুনর্বার
মেঘ সব জানে॥
২
শরৎ
বৃষ্টি হলে ওই মুখ
আবছায়া হয়ে যায়
মেঘে ঢাকা পড়ে ওই
কৃষ্ণকলি চোখ...
কেউ ভালো নেই আর।কেউ আর
ভুল করে না
ভালোবাসে না।
দেবতার নামে ভয় পায়
সকলেই বলি হয়, নিরুপায়
গ্রাম ভেসে ভেসে ডুবে যায়।
চারিদিকে কোঁচকানো ভুঁরু
কাদের মেঘে যেন।
আমি সরে যাই দূরে
দূরের অরণ্যে
ঘোমটার অন্তরালে আগুনের শিখা
ধিকি ধিকি জ্বলে
সাদা কাগজেরা শঙ্খচিল হয়ে যায়
আমার কলমে রক্ত ঝরে পড়ে
পায়ের তলায় বাজ;
আমি চুপ করে থাকি
ভোরের শিশির টুপটাপ
ঝরে পড়ে আমার ধানের ক্ষেতে ।।
জয়িতা ভট্টাচার্যর অণুগল্প--
সরোবর
মেয়েটি একাই হাঁটছে ।শুনশান অপরাহ্ন ।রোদের ঝাঁঝালো আলোয় তার ফর্সা মুখ তৈলাক্ত ।আলোর মতো হেঁটে এসে দুটি সিগ্রেট কেনে ।রিকশাওয়ালা রম্য এক সরোবরের পাশ কাটিয়ে গলি,আরও গলিতে .....যেখানে দরিদ্র মেয়েদুটি রাস্তার জলে ভিজিয়ে নিচ্ছে দেহ ,বাসন মাজতে মাজতে আড়ে দেখে নেয় মেয়েটিকে।মেয়েটি নজর কাড়তে পারে ।সুন্দরী খুবই নয় ,চোখ দুটি বড়ো বড়ো,তবে অন্য একটু কি যেন আকর্ষণ ।রিকশা থেকে নামে ,মোবাইলটা অফ করে দেয়।দরজা খোলাই থাকে ।তার জন্য একটু খাবার একটু পানীয় আনা থাকে।দুজনে পাশাপাশি বসে গুনগুন কথা বলে,খায়,মেয়েটি সাময়িক গৃহিনী যেন।রান্নাঘরে কাজ করে পাশে পুরুষটি সহায়তা করে অনাবশ্যক। ঘাড়ে উষ্ণ নিঃশ্বাস ঝড়ের ইঙ্গিত দেয়।এই
ঘরেই থাকে ওই সুপুরুষ প্রৌঢ়।মাঝে মাঝে।একটি-ই ঘর ।এলোমেলো বই ,স্পিকার,গানের শুধুই আর কিছুনা ।দরজা বন্ধ হয় ।কবিতার কথা ,কখনো হাসির কথা কখনো দুঃখের ।পুরুষটি অনাবৃত দেহ,দীর্ঘ, গৌরবর্ণ, পরনে প্যান্ট বা শুধুই অন্তর্বাস ।মেয়েটিও গায়ের জামা খুলে বসে শুয়ে থাকে ।নির্জন দুপুর গড়িয়ে যায় বিকেলের দিকে ।তারপর হঠাৎ কিন্তু অনিবার্য দৈনিক রুটিনের মতো ভালোবাসাবাসি হয়।প্রণয়ের ধ্বনি গুলি এ দেওয়াল থেকে সে দেওয়াল ধাক্কা খায় ।উড়ন্ত চামচিকের মতো ।অন্ধকার হয়ে আসে তবু ওরা আলো জ্বালেনা ।অলস মুহূর্ত কাটে সংযোগে ,সান্নিধ্যে ।একসময় পরিতৃপ্ত মেয়েটি চলে যায় ।দীর্ঘ এক চুম্বনে বিদায় জানায় পুরুষটি ।
এভাবেই সরোবরের পাশের রাস্তা দিয়ে আসে মেয়েটি, মাস - বছর ।
তারপর একদিন মেয়েটি ফেরে চোখের জল মুছতে মুছতে ।তারপর আরও একদিন একা একা মেয়েটি রাতে ফেরে ,সরোবরের পাশের রাস্তাটা দিয়ে ।দু-একটি কুকুর পেছু নেয় তার ।টিমটিমে আলোয় চাওয়ালাও দেখে ।আজ যেন চলতে কষ্ট।ভারী হয়ে গেছে পা,মনটা শূন্য ।তেমনকিছু শ্রুতি মুখর বিতর্ক নয়, নয় কোনো আচম্বিত গ্রহণ ।তবু অনুভুতি জানান দেয় সম্পর্কহীনতার আভাস ।
বাড়িটি আছে ,আছে বইগুলিও ।মানুষটি ও ।শুধু মেয়েটিকে আর দেখা যায়নি কোনোদিন সরোবরের পাশ দিয়ে যেতে।
মেয়েটি ক্রমশ বিবর্ণ হয় মেয়েটি আরও শীর্ণ হয় । রুগ্ন হতে থাকে ।
মেয়েটির মনে পড়ে রাস্তা,জলের কল ,কোঁচকানো বিছানার কথা .........এমনকি সরোবরটির কথা ।
অসুখেও কষ্ট পায় কিন্তু তার সেই গোপন বাসাটি ভেঙে যাবার গ্লানি তাকে বিদ্ধ করে প্রতিনিয়ত ।
সরোবরের শীতল জলে হাঁস ,সরোবরের ধারে বিকেলে বসে থাকে বৃদ্ধের দল ,নীল রেলিঙ ......
_____#______
No comments:
Post a Comment