Thursday 7 October 2021

মহুয়া ব্যানার্জীর গল্প-- ব্রেকিং নিউজ


মহুয়া ব্যানার্জীর গল্প-- 

ব্রেকিং নিউজ

 -ওহ মাই গড, এই ভিডিওটা দেখ। ইটস সো অ্যাডভেঞ্চাচারাস! শিলাদিত্য বলে ওঠে।

- আরে ওতো হিরো সনম। বিখ্যাত ইউটিউবার। ওর এসব ভিডিও করে কত রোজগার জানিস? বলে সিমি।

- এসব করে ইনকাম হয়? দারুণ ব্যাপার তো।

শিলাদিত্যর কথায় সিমি আরও উত্তেজিত হয়ে বলে

- আরে ইউটিউব, টিকটক এসব করে খুব সহজেই অনেক অনেক টাকা রোজগার করা যায়। তবে সেসব ভিডিও হতে হবে এমন অ্যাডভেঞ্চারাস। যাতে লোকে রূদ্ধশ্বাসে দেখে আর লাইক করে। সাবস্ক্রাইব করে। এমনি এমনি তো আর মিলিয়ন ভিউয়ার হবে না। 

সিমির কথাগুলো  যেন রঙীন স্বপ্নের পালক বুলিয়ে দিল শিলাদিত‍্যর চোখে। এসব কথপোকথনের মাঝেই মোবাইলের স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে পড়ে ক্লাস নাইনের দুই বন্ধু। মোবাইলে তখন আরেক বিখ্যাত ইউটিউবার ইয়ো ইয়ো গ্যাংস্টার এর রূদ্ধশ্বাস স্টান্ট চলছে। সরু পাহাড়ী রাস্তায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে দ্রুতগতিতে বাইক চালাচ্ছেন তিনি আর পেছনে মোবাইলে ভিডিও করছে আর একজন। সাথে চলছে এই স্টান্ট করার টেকনিক, রাস্তার বর্ননা, আর ইয়ো ইয়ো গ্যাংস্টারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। লাফিয়ে লাফিয়ে ভিউয়ার বাড়ছে। 

সেইসঙ্গে বাড়ছে শিলাদিত্যর এসব দেখার নেশা।

সময় বয়ে যায়। ক্লাস টুয়েলভ বোর্ডের পরীক্ষা সামনেই। কিন্তু শিলাদিত্য আর সিমির ঘর বাস নেই। তারা তখন অ্যাডভেঞ্চার ভিডিও বানানোর নেশায় মশগুল। 

- দেখ শিলা, আমার কিন্তু এবার বেশ ভয় করছে। সিমি বলে। 

- আরে এই দুবছরে কত রকমের ভিডিও করেছি। তখন তো এত ভয় পাসনি। শিলাদিত‍্যর এ কথায় সিমি বেশ রেগে যায়। বলে, 

- সেসব তো এত ভয়ংকর ছিল না। কিন্তু আজকের টা বেশ ভয়ের। তাছাড়া আমাদের কি হবে এসব করে? এই একবছরে এত কিছু করেও তো তেমন কিছু ভিউয়ার বাড়ে নি। মোটে 20 কে। সিমি বলে। 

- সেই জন্যই তো। অল্প রোজগার থেকে একলাফে কেমন রোজগার আর ভিউয়ার বাড়ে তার জন‍্যই তো এই স্টান্ট করবো আজ। আজ গোটা দুনিয়া আমায় চিনবে। আরে তোকে কি টাকার ভাগ দিই না? তবে। 

উড়ালপুলের একদিকে এখন খুব ভীড়। মিডিয়া আর পুলিশে ছয়লাপ। একপাশে দুটো মৃতদেহ রক্তে মাখামাখি। একটা তোবড়ানো বাইক পড়ে আছে অদূরে। তারও কিছু দুরে আরও একটি কিশোরকে ভয়াবহ আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। 

সব চ্যানেলেই এখন একটাই খবর ' চলন্ত বাইকে  বিপজ্জনক খেলা দেখানো ও তার ভিডিও করতে গিয়ে  দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সিমি রায় ও শিলাদিত্য দাস মৃত। অপর এক ছাত্র আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।'

আজ সত্যিই তাদের সারা পৃথিবী চিনে গেল। আজ তারা বিখ্যাত।

 

2 comments: