শান্তা মিত্রের কবিতা--
অনুভবের জীবন
জীবন তো এক নদী পাড়ি দেয় এপার থেকে ওপার।
থামতে শেখেনি সে শুধুই চলা আর চলা কখনো মসৃণ বা কখনো বাঁকা।
জীবনের শুরু হলো সুখ দুঃখের মেলা আর চলা আর শেষ তার মৃত্যুতে।
পিছনে ঘুরে দেখে না সে, খালি অবাধে এগোয় আর এগোয়।
তাই সে জীবন তাই সে সত্য ও চিরন্তন।
কার আছে সাধ্য তাকে কে করে অমান্য ও অপমান ও অবহেলা।
কখনো বা বড়োই হিংসুটে কারোর প্রতি, আবার কারোর জন্য অগাধ তার ভালোবাসা
তার এই বিচিত্র চলাকে নিয়েই মোদের সবার চলন বলন।
জীবন যুদ্ধ বড়ো কঠিন যুদ্ধ, কঙ্কর ময় এই জয় করাতেই যে আনন্দ ও সুখ।
সে যে চলে তার ছন্দে ও তালে নিঃশব্দে ও নীরবে। মানে না কোনোই বারণ শাসন।
তাই জীবনের অপর নাম চলা আর থেমে যাওয়ার নাম হারা।
তাই এগিয়ে চলো আর এগিয়ে চলো কখনোই থেমো না বন্ধু।
শান্তা মিত্রের গল্প--
একটি জীবনের গল্প
গতবছর কালি পূজোর সময় আমি একটা কাজে শিয়ালদা গিয়েছিলাম। তখন বিকেল ৫ টা হবে, জায়গা টা ষ্টেশন এর খুবই কাছেই। যখন আমি ডি আর এম বিল্ডিং পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ যেতে যেতে থমকে গেলাম,আর দেখলান একজন বয়স্কলোক রাস্তায় পড়ে আছে বা বসে আছে খুব বাজেভাবে। উনার পা দুটো এমনভাবে ছড়িযে আছে, যে কোন ভাবে আঘাত লাগতেই পারে যে ভাবে গাড়ি ঘোড়া যাচ্ছে। আর অটো তো অনবরত আনাগোনা চলছেই। লোকটাকে দেখে কে খুবই অসুস্থ মনে হলো। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো উনার, পাশে জলের বোতল বিস্কুট সব পড়ে ছিলো কিন্তু উনার নিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা ছিলো না। উনি কোরোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা জানিনা, হয়তো ছিলেন। খুব খারাপ লাগছিলো একা আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। কত লোকজন যাতায়াত করছে কিন্তু কেউ আসছিলো না কাছে। তখন কোনো দিশা না পেয়ে আমি ওই ডি আর এম বিল্ডিং র ভিতরে গেলাম, আর ওখানে যে সিকুরিটি ছিলো তাকে বললাম ওনাকে একটু হসপিটাল নিয়ে গেলে ভালো হতো উনি ওখানে ওভাবে পড়ে আছেন। ওর কাছেই শুনলাম উনি সকাল থেকেই এভাবে পড়ে আছে, শুনে অবাক লাগল এইরকম একটা জায়গায় এত লোকজন যেখানে বাস করে যাতায়াত করে সেখানে কেউ একটু কিছু করতে পারেনি....
সিকিউরিটি দা বলল ওটা আমাদের জায়গা নয় তাই আমরা এখানে কোন কিছু করতে পারবোনা। একটা লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে আর এরা এর জায়গা ওর জায়গা করে এড়িয়ে যাচ্ছেন, এটা ব্যাপার টা ঠিক আমার মাথায় ঢুকলো না। যাক তখন ওখানে আমার আর কিছু করনীয় ছিল না, ঐ মুহুর্তে আমি ছুটে গেলাম রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সন্ধানে ওরা যদি কিছু করতে পারে। ওই এলাকাটা আমার পরিচিত ছিল না, কোথায় থানা আমি ঠিক জানতাম না তাই পুলিশের সন্ধানে আমি মেন রোডে গেলাম ওখানে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে ট্রাফিক পুলিশের দেখা পেলাম। একজন বড় অফিসার বলেই মনে হলো উনাকে সমস্ত ব্যাপার খুলে বললাম আর বললাম একটু ব্যবস্থা করুন ওই লোকটা ওখানেই হয়তো মারা যেতে পারেন বা কোরোনা ও হতে পারে তাই উনাকে হস্পিটালাইজড করতে হবে এখুনি। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম উনি উনার ফোন থেকে ফোন করলেন কোথাও আর আমাকে বললেন আপনার টেনশন নেই আমরা চেষ্টা করছি উনাকে ভর্তি করার। তারপর আমি আমার কাজে বেরিয়ে গেলাম। যখন আমি কাজ শেষ করে ফিরছি আর মনে মনে ভাবছি এতক্ষণ এ হয়তো ভর্তি হয়ে গেছেন উনি। কিন্তু কই... তাজ্জব ব্যাপার লোকটা ওখানেই পড়ে আছে ওই একইভাবে। এত চেষ্টা করলাম কিন্তু লোকটার কষ্ট লাঘব করতে পারলাম না। সেই উনি কষ্টেই এইভাবেই ওখানেই প্রাণত্যাগ করবেন হয়তো । খুব খারাপ লাগছিলো কষ্ট হচ্ছিলো উনার জন্য। কিভাবে কে এইভাবে মানুষটাকে ফেলে চলে গেল একটু দয়া মায়াও হলো না তার। এটা হয়তো আমরা মানুষরাই পারি এতটা স্বার্থপর হতে। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমি বাড়িতে চলে যাব আর লোকটা এমন ভাবেই পড়ে থাকবে । ভাবতে ভাবতেই দেখি দুটো অল্প বয়সী ছেলে ওখান দিয়ে যেতে যেতে উনাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ওদের দেখে একটু আশার আলো দেখলাম যদি ওদেরকে বলে কিছু করতে পারি। ওদেরকে সমস্ত টা বললাম আর ওদের বললাম দেখো ভাই তোমরা যদি একটু ব্যবস্থা করতে পারো অনেকক্ষণ ধরে পড়ে আছেন। আমি তো পুলিশকে বলেছি কিন্তু তাও উনি কষ্ট পাচ্ছেন। ওরা বললো দেখছি। এবার আমি বাড়ি দিকে রওনা দিলাম মন খারাপ নিয়েই বেশ অনেক টাই রাত হয়েছে আবার কালিপূজোর রাত। বাড়ি ঢুকে ওদের বললাম ঘটনা টা। ঠিক আধঘণ্টা বাদে খবর পেলাম উনাকে নিয়ে গেছে হসপিটালে কে বা কারা জানি না। মনে বেশ শান্তি পেলাম। আমি বলায় কাজ হলো না ওই ছেলেগুলো ব্যবস্হা করলো জানি না। কিন্তু উনার একটা ব্যবস্হা তো হলো এটাই আমার শান্তি। (এটা সত্যি ঘটনা আমার নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া)।
No comments:
Post a Comment